শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

কুমিল্লায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে নবজাতকের অর্ধগলিত লাশ



কুমিল্লা প্রতিনিধি: আবারও এক মর্মান্তিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা কুমিল্লা! জেলায় চলছে এ কীসের খেলা? যেখানে জীবনের আলোর প্রথম ঝলক দেখার কথা, সেখানেই আজ ডাস্টবিন আর ড্রেন থেকে উদ্ধার হচ্ছে ফুটফুটে নবজাতকের অর্ধগলিত নিথর দেহ। যদিও ঘটনাটি সরাসরি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের নয়, কিন্তু জেলারই গুরুত্বপূর্ণ দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ঠিক পাশের ড্রেনে এক নবজাতকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এতেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কুমিল্লার বড় হাসপাতাল থেকে শুরু করে ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত— সর্বত্রই মানবতাবিরোধী এক ভয়ংকর চক্র সক্রিয়? নাকি সমাজের অন্ধকারে জন্ম নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত পাপের বোঝা বহন করছে এই মৃত শিশুরা?

ঘটনাস্থল থেকে বিস্তারিত:

গতকাল, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের এক কর্মীর নাকে আসে তীব্র দুর্গন্ধ। গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানালার ঠিক পাশের ড্রেনের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠেন তিনি। ড্রেনের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটি সদ্যোজাত শিশুর অর্ধগলিত মরদেহ! মুহূর্তেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতাল জুড়ে।

দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল কাউছার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুর্গন্ধের খবর পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়েই এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখা যায়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে দ্রুত পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

তদন্তে যা জানা গেল:

দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জামশেদুল আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করেন। তিনি জানান, "নবজাতকটি পূর্ণাঙ্গ ছিল বলে মনে হচ্ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন আগের। এটি একটি অপমৃত্যু, তবে হত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।"

তদন্তের মূল ভিত্তি এখন হাসপাতালের ডেলিভারি রেজিস্টার এবং সিসিটিভি ফুটেজ। তবে, এক ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে এসেছে— হাসপাতালের কিছু সিসি ক্যামেরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে!

বালেরখবর.কম-এর নিজস্ব বিশ্লেষণ:

দায়িত্বশীল জায়গা হিসেবে পরিচিত হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এর আগেও ওই হাসপাতালের সভাকক্ষের পেছনে, আবাসিক এলাকার পরিত্যক্ত স্থানে এবং ড্রেনে নবজাতকের মরদেহ পাওয়া গেছে। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি হলেও কোনো ঘটনারই সঠিক ফলাফল আলোর মুখ দেখেনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিবুস সালাম খান বলেছেন, "রেজিস্টারের আওতায় কোনো নবজাতক এভাবে ফেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। হয়তো কেউ অপগর্ভজাত শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে গেছে।"

তবে বালেরখবর.কম মনে করে, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এবং বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি— এগুলি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না। এর পেছনে হাসপাতালের ভেতরের কিংবা বাইরের কোনো শক্তিশালী চক্রের যোগসাজশ থাকতে পারে। যারা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকারদের সাহায্য করার নামে এই নৃশংস কাজ করছে। এই ঘটনার দ্রুত এবং নিরেপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। নয়তো কুমিল্লার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি পরিণত হবে নবজাতকদের বধ্যভূমিতে!

কেস স্টাডি: অতীতে যা ঘটেছিল

নবজাতক নিয়ে কুমিল্লার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও পূর্বে বড় ধরণের অভিযোগ উঠেছে। যেমন, ২০১৯ সালে কুমিল্লার টমছমব্রিজ এলাকার হলি ফ্যামিলি হসপিটালে এক নবজাতকের চিকিৎসায় অবহেলা এবং মৃত্যুর পর তার পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেট থেকে দালালরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাগুলিই প্রমাণ করে, কুমিল্লার স্বাস্থ্যখাতে দালাল ও অসাধু চক্রের দাপট কতটা ভয়াবহ!


বালেরখবর.কম জনগণের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানাচ্ছে, শুধু দেবীদ্বার নয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিসিটিভি সিস্টেম ২৪ ঘণ্টা সচল রাখা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে এই নবজাতকের মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করা হোক। না হলে মানুষের বিশ্বাস আর ভরসার শেষ আশ্রয়স্থলটিও পরিণত হবে এক আতঙ্কপুরীতে।


শেয়ার করুন

Author:

বালেরখবর.কম - পাঠকদের মনোরঞ্জন এবং চটকদার খবর পরিবেশন, প্রয়োজনে সঠিক তথ্যও তুলে ধরা।

0 coment rios:

আপনার মতামত দিন